March for Gaza | ঢাকা | ২০২৫

 🔴 ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা

March for Gaza | ঢাকা | ২০২৫


বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম

আল্লাহর নামে শুরু করছি যিনি পরাক্রমশালী, যিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারী, যিনি মজলুমের পাশে থাকেন, আর জালেমের পরিণতি নির্ধারণ করেন। আজ আমরা, বাংলাদেশের জনতাযারা জুলুমের ইতিহাস জানি, প্রতিবাদের চেতনা ধারণ করি সমবেত হয়েছি গাজার মৃত্যুভয়হীন জনগণের পাশে দাঁড়াতে। আজকের এই সমাবেশ কেবল প্রতিবাদ নয়, এটি ইতিহাসের সামনে দেওয়া আমাদের জবাব, একটি অঙ্গীকার, একটি শপথ এই পদযাত্রা ও গণজমায়েত থেকে আজ আমরা চারটি স্তরে আমাদের দাবিসমূহ উপস্থাপন করব-


আমাদের প্রথম দাবিগুলো জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি।

যেহেতুজাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সকল জাতির অধিকার রক্ষার, দখলদারিত্ব ও গণহত্যা রোধের সংকল্প প্রকাশ করে;

এবং আমরা দেখেছি, গাযায় প্রতিদিন যে রক্তপাত, যে ধ্বংস চলছে, তা কোনো একক সরকারের ব্যর্থতা নয়বরং এটি একটি আন্তর্জাতিক ব্যর্থতার ফল এবং এই ব্যর্থতা শুধু নীরবতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং পশ্চিমা শক্তিবলয়ের অনেক রাষ্ট্র সরাসরি দখলদার ইজরায়েলকে অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে এই গণহত্যাকে দীর্ঘস্থায়ী করেছে;

এবং এই বিশ্বব্যবস্থা দখলদার ইজরায়েলকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে বরং রক্ষা করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে; সেহেতুআমরা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোরালো দাবি জানাচ্ছি:


১। জায়নবাদী ইজরায়েলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করতে হবে;


২। যুদ্ধবিরতি নয়গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে;


৩। ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে;


৪। পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে;


৫। ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা, এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করতে হবে; কারণএই মুহূর্তে বিশ্বব্যবস্থা যে ন্যায়ের মুখোশ পরে আছে,গাযার ধ্বংসস্তূপে সেই মুখোশ খসে পড়েছে।


আমাদের দ্বিতীয় দাবিগুলো মুসলিম উম্মাহর নেতৃবৃন্দের প্রতি। যেহেতু আমরা বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিন কেবল একটি ভূখণ্ড নয়এটি মুসলিম উম্মাহর আত্মপরিচয়ের অংশ; এবং গাযা এখন কেবল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর নয় এটি আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতার বেদনাদায়ক প্রতিচ্ছবি; এবংউম্মাহর প্রতিটি সদস্য, প্রতিটি রাষ্ট্র, এবং প্রতিটি নেতৃত্বের উপর অর্পিত সেই আমানতযা আল্লাহ প্রদত্ত ভ্রাতৃত্ব ও দায়িত্বের সূত্রে আবদ্ধ এবংইজরায়েল একটি অবৈধ, দখলদার, গণহত্যাকারী রাষ্ট্রযা মুসলিমদের প্রথম কিবলা ও একটি পুরো জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে;এবংভারতের হিন্দুত্ববাদ আজ এই অঞ্চলে জায়নবাদী প্রকল্পের প্রতিনিধিতে পরিণত হয়েছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত দমন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে; 

এবংভারতে সম্প্রতি ওয়াকফ সম্পত্তি আইনে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মুসলিমদের ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক অধিকার হরণ করা হয়েছে যা উম্মাহর জন্য একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা; সেহেতু আমরা মুসলিম বিশ্বের সরকার ও ওআইসি’র মত মুসলিম উম্মাহর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর নিকট দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাই:


১। ইজরায়েলের সাথে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সকল সম্পর্ক অবিলম্বে ছিন্ন করতে হবে;


২। জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে;


৩। গাযার মজলুম জনগণের পাশে চিকিৎসা, খাদ্য, আবাসন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সহ সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে;


৪। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইজরায়েলকে এক ঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করতে হবে;


৫। জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনের অধীনে মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াকফ আইনে হস্তক্ষেপের মতো রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসি ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নিতে হবে; কারণ গাযার রক্ত প্রবাহে আমরা লজ্জিত হওয়ার আগেই, গাযার পাশে দাঁড়ানোই উম্মাহর জন্য সম্মানের একমাত্র পথ।


এবং যে নেতৃত্ব আজ নিরব, কাল ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য হবে।

আমাদের তৃতীয় দাবিগুলো বাংলাদেশ সরকারের প্রতি যেহেতু বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র, যার স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত্তিতেই নিহিত রয়েছে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চেতনা এবং আমরা বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিনের প্রশ্নে বাংলাদেশ কেবল মানবতার নয়ঈমানের পক্ষেও এক ঐতিহাসিক অবস্থানে আছে এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে সরকারের দায়িত্ব, জনগণের ঈমানি ও নৈতিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা রাখা এবং বাংলাদেশের জনগণ গাযার পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে, তাই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিরবতা এই জনআকাঙ্ক্ষার প্রতি অবজ্ঞার শামিল সেহেতু আমরা বাংলাদেশের সরকারের প্রতি দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাই:


১। বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘Except Israel’ শর্ত পুনর্বহাল করতে হবে এবং ইজরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার অবস্থান আরও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে;


২। সরকারের ইসরায়েলি কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে যত চুক্তি হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে;


৩। রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে;


৪। সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং আমদানি নীতিতে জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশনা দিতে হবে;


৫। জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের অধীনে মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে, যেহেতু হিন্দুত্ববাদ আজ শুধু একটি স্থানীয় মতবাদ নয়বরং আন্তর্জাতিক জায়নিস্ট ব্লকের অন্যতম দোসর;


৬। পাঠ্যবই ও শিক্ষা নীতিতে আল-আকসা, ফিলিস্তিন, এবং মুসলিমদের সংগ্রামী ইতিহাসকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যাতে ভবিষ্যৎ মুসলিম প্রজন্ম নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয় নিয়ে গড়ে ওঠে কারণরাষ্ট্র কেবল সীমানা নয়, রাষ্ট্র এক আমানত।


আমাদের সর্বশেষ দাবিগুলো নিজেদের প্রটি যা মূলত একটি অঙ্গীকারনামা

যেহেতুআমরা বিশ্বাস করি, আল-কুদস কেবল একটি শহর নয়এটি ঈমানের অংশ; এবংআমরা জানি, বাইতুল মাকদিসের মুক্তি অন্য কারো হাতে নয়আমাদেরই কোন প্রজন্মের হাতে তা লেখা হবে; এবংআমরা বুঝি, জায়নবাদের প্রতিষ্ঠা মূলত আমাদের নিজেদের আত্মবিস্মৃতির ফল;

এবংআজ যদি আমরা প্রস্তুত না হই, তাহলে আল্লাহ না করুন কাল আমাদের সন্তানেরা হয়তো এমন এক বাংলাদেশ পাবে যেখানে হিন্দুত্ববাদ ও জায়নবাদ একত্রে নতুন গাজা তৈরি করবে;এবং গাযা আমাদের জন্য এক আয়না যেখানে আমরা দেখতে পাই, কীভাবে বিশ্বাসী হওয়া মানে কেবল বেঁচে থাকা নয়, সংগ্রামে দৃঢ় থাকা; সেহেতুআমরা এই মাটির মানুষ, এই মুসলিম ভূখণ্ডের নাগরিক, এই কওমের সন্তান এবং সর্বোপরি মুসলিম উম্মাহর সদস্যএকটি অঙ্গীকার করছি:


১। আমরা সকলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বয়কট করবোপ্রত্যেক সেই পণ্য, কোম্পানি ও শক্তিকে যারা ইজরায়েলের দখলদারিত্বকে টিকিয়ে রাখে;


২। আমরা আমাদের সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করবোযারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সকল প্রতীক ও নিদর্শনকে সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করবে, ইন শা আল্লাহ;


৩। আমরা আমাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলবোযারা নিজেদের আদর্শ ও ভূখণ্ড রক্ষায় জান ও মালের সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত থাকবে;


৪। আমরা বিভাজিত হবো নাকারণ আমরা জানি, বিভক্ত জনগণকে দখল করতে দেরি হয় না।

আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো, যাতে এই বাংলাদেশ কখনো কোনো হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের পরবর্তী গাজায় পরিণত না হয়।

আমরা শুরু করবো নিজেদের ঘর থেকেভাষা, ইতিহাস, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, সমাজসবখানে এই অঙ্গীকারের ছাপ রেখে।

আমরা মনে রাখবো:


গাযার শহীদরা কেবল আমাদের দোয়া চান না তাঁরা আমাদের প্রস্তুতি চান।

শেষকথাঃ শান্তি বর্ষিত হোক গাযার সম্মানিত অধিবাসীদের উপরতাঁদের উপর, যাঁরা নজিরবিহীন সবর করেছেন, যাঁরা অবিচল ঈমানের প্রমাণ দিয়েছেন। যাঁরা ধ্বংসস্তূপের মাঝেও প্রতিরোধের আগুন জ্বেলেছেন বিশ্বের নীরবতা ও উদাসীনতার যন্ত্রণা হাসিমুখে বুকের মাঝে ধারণ করেছেন।

শান্তি বর্ষিত হোক তাদের উপর, যাঁরা নাম রেখে গেছেন ইজ্জতের খতিয়ানে

শান্তি বর্ষিত হোক হিন্দ রজব, রীম এবং ফাদি আবু সালেহ সহ সকল শহীদেরর উপর, যাঁদের রক্ত দ্বারা গাজার পবিত্রভূমি আরো পবিত্র হয়েছে, যাঁদের চোখে ছিল প্রতিরোধের অগ্নিশিখা। শান্তি বর্ষিত হোক বাইতুল মাকদিসের গর্বিত অধিবাসীদের উপর, যাঁদের হৃদয়ে এখনো ধ্বনিত হয় ‘আল-কুদস লানা’, আল কুদস আমাদের!


গাজার জনগণকে অভিনন্দন, আপনারা ঈমান, সবর আর কুরবানীর মহাকাব্য রচনা করেছেন।দুনিয়াকে দেখিয়েছেন ঈমান আর তাওয়াক্কুলের শক্তি। আমরা, বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের সালাম জানাই,আপনাদের শহীদদের প্রতি ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা জানাই, আর আমাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় এই দো‘আ, হে আল্লাহ, গাজার এই সাহসী জনপদকে তুমি সেই পাথর বানিয়ে দাও,যার উপর গিয়ে ভেঙে পড়বে জায়োনিস্টদের সব ষড়যন্ত্র।বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের পক্ষে,প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট, বাংলাদেশ।

Comments

Popular posts from this blog

পারভেজ নামের এই ছেলেটি তার নিজের ক্যাম্পাসে খুন হয়েছে আজ!

সংবাদ সম্মেলন থেকে রের করে দেওয়া হয়েছিল নারী সংবাদিকা কে!

ইমাম মুয়াজ্জিন হুজুরদের ফাসানো একিবারে সহজ, তাইনা?