জজ ভিন্ন হতে পারে কিন্তু রায় ও আইন তো নয়! - তাহলে বৈষম্য কার স্বার্থে!

জজ ভিন্ন হতে পারে কিন্তু রায় ও আইন তো নয়!

তাহলে বৈষম্য কার স্বার্থে!

বৈসম্যের সাথে জয় পরাজয়।

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন করে এদেশ থেকে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের পতন ঘটানো হয়েছে ভেবেছিলাম হয়তবা বৈষম্যের কবর রচিত হয়েছে কিন্তু না! এখন দেখলাম বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া নেতারাই ক্ষমতার চেয়ারে বসে বৈষম্যের জন্ম দিচ্ছে! 


শেখ হাসিনার পতনের পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় কর্তৃক মেয়র কাউন্সিলরদের অপসারণ করা হয়েছে, 

সিটি ও পৌর মেয়রের জায়গায় বসানো হয়েছে প্রশাসক, 

যারা মেয়রের অনুপস্থিতিতে তাদের কার্য সম্পাদন করবেন।


বছরের শুরুর দিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে আদালতের রায়ে মেয়রের চেয়ারে বসার অনুমতি পেয়েছেন বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগরের নেতা শাহাদাত হোসেন, গতমাসে আদালতের রায়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মেয়রের চেয়ারে বসার অনুমতি পেয়েছেন বিএনপির নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন।


আমরা তাদের স্বাগত জানাই!


আমরা জানি এই দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শাহাদাত এবং ইশরাক উভয়ই ভোটের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলো, প্রথম অবস্থানে জোরপূর্বক দখলে রেখেছিলো পতিত আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।

তারা সে সময় ভোটের ফল প্রত্যাখান করে আদালতে মামলা দায়ের করেছিলো আর সেই মামলার রায় হয়েছে এ বছর। 

ফলশ্রুতিতে মেয়র হয়েছে তারা দুজন।

যেহেতু আইন আইনের গতিতে চলে তাই আইন অনুযায়ী তারা তাদের অধিকার ফিরে পেয়েছে।


স্থানীয় সরকার আইন ২০০৯ তে বলা আছে মেয়রের অনুপস্থিতিতে প্যানেল মেয়র অথবা ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কিংবা ভারপ্রাপ্ত মেয়রগণ মেয়রের দ্বায়িত্ব পালন করতে পারবে। যেহেতু সকল কাউন্সিলর অপসারণ করা হয়েছে সুতরাং এই আইনের বলয় এখানে নেই। 

এখানে সোজা ভোটের হিসাব বিবেচনা করে যিনি দ্বিতীয় স্থানে ছিলো তাকে মেয়র হিসেবে রায় দিয়েছে আদালত,

বিভিন্ন আলামত প্রমাণ সাপেক্ষে এই রায় হয়ে থাকে বলেই আমরা জানি।

এখানে স্থানীয় সরকার আইন কোনো ভাবেই হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাখেনা এখানে শুধু আদালত তার গতিতে রায় প্রদান করতে পারে।

আদালতের রায়ের কপি ইলেকশন কমিশন তারপর সেখান থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে পৌঁছে তারপর সেটা গেজেট আকারে প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়।

অতঃপর শপথ গ্রহণ করানো হয় এবং পাকাপোক্তভাবে মেয়রের চেয়ারে বসার পারমিশন দেওয়া হয়।

এই হচ্ছে বিধান!


কথা হলো চট্টগ্রাম ঢাকা দক্ষিণ এই দুই সিটির জন্য যে আইন বলবৎ রয়েছে বরিশালের জন্য কি আলাদা আইন রয়েছে নাকি একই আইন রয়েছে! 

যদি আলাদা আইন থেকে থাকে তাহলে তো প্রশ্ন লরার সুযোগ নেই আর যদি একই আইন হয়ে থাকে তাহলে কথা বলার অনেক কিছু আছে এবং সেটা যৌক্তিক। 


বরিশাল সিটি প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন এভাবে রায় দেওয়া নাকি মন্ত্রনালয় ও আদালতের সামঞ্জস্যপূর্ণ! কিন্তু চট্টগ্রাম ও ঢাকা দক্ষিণের বেলায় তার এই বক্তব্য ছিলো না।

তাহলে কি আমরা ধরে নিতে পারিনা যে তিনি বরিশালের বিষয়ে আলাদা মন্তব্য করে নতুন বৈষম্যের জানান দিচ্ছে! 

আমরা তার এই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার দাবী করি এবং আদালতকে আদালতের গতিতে চলার স্বাধীনতা দেওয়ার দাবী জানাই।


একই সুরে বক্তব্য দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের আরেক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, আমরা তার বক্তব্যকেও ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি। তারও উচিত তার বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করা কারণ ঢাকা চট্টগ্রামের বিষয়ে আমরা তারও কোনো বক্তব্য পাইনি। বরিশাল সিটি প্রসঙ্গে তার মন্তব্য আমরা গ্রহণ করলাম না।


বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ইলেকশনে কি হয়েছে তা সকলের জানা আছে, এবং সেটা প্রকাশ্য দিবালোকের মতো পরিস্কার। তবুও বরিশাল সিটি প্রসঙ্গে আদালতের বৈষম্য আমরা মানতে পারলাম না।

আইন যদি তার নিজস্ব গতিতে চলে তাহলে ঢাকা চট্টগ্রামে রায় এক ও অভিন্ন হলে বরিশালের বেলায় অন্য আইন হবে কেনো!


আমরা চাই ঢাকা চট্টগ্রামে যে আইনের বলয়ে মেয়র রায় হয়েছে বরিশালেও সেই আইনের বলয়েই মেয়র রায় হোক।


শাহাদাত চট্টগ্রামের ইশরাক ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হতে পারলে মুফতী ফয়জুল করীম কেনো বরিশালের মেয়র হতে পারবেন না! প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। 


ই আন্দোলনের ব্যর্থতা!

ই আন্দোলন বরাবরই একটা জপনা জপে তারা আদর্শের রাজনীতি করে ক্ষমতার রাজনীতি করেনা! অথচ আদর্শ সর্বস্তরে বাস্তবায়ন করতে হলে ক্ষমতার দরকার রয়েছে। 

শুধু রাজনীতি করে আদর্শ প্রচার করা যাবে বাস্তবতায় নেওয়া যাবেনা।

ই আন্দোলনের উচিত ছিলো বরিশাল সিটি প্রসঙ্গে আরো আগেই আদালতের শরণাপন্ন হওয়া কিন্তু তারা তাদের জায়গা ঘাপটি মেরে বসে ছিলো।


ই আন্দোলনকে আরে সোচ্চার হতে হবে, তাদেরকে আরো এক্টিভিটি বাড়াতে হবে সকল বিষয়ে, তাদের দেখলাম ই আন্দোলনের অংশ রয়েছে আইনজীবী পরিষদ নামে! অথচ একজন আইনজীবীও ছিলোনা তাদের হয়ে একটা মামলা করার জন্য এতদিন! 

এখন কেনো তড়িঘড়ি করতে হচ্ছে এতদিন কি ঘোড়ার ডিম নিয়ে বসে ছিলো!


বরিশাল জেলা দায়রা আদালত মুফতী ফয়জুল করীমের মামলা খারিজ করেছে কার্যতই এখন তাদেরকে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হতে হবে, কাল বিলম্ব না করে তাদের উচিত যত দ্রুত সম্ভব বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে যাওয়া। মহামান্য হাইকোর্ট অবশ্যই সুবিচার করতে সক্ষম হবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।


আইন আদালত কার!

আমাদের দেশে একটা কথা জারি আছে, মানুষ আইনের জন্য না আইন মানুষের জন্য! 

দেশের মানুষ চাইলে সরকার পরিবর্তন করতে পারে সংবিধান পরিবর্তন করতে পারে আইনও পরিবর্তন করতে পারে, তবে চট্টগ্রাম ঢাকা বরিশাল সিটির বিষয়ে আইন তো পরিবর্তন হয়নি ঢাকাতে যা চট্টগ্রামে তা তাহলে বরিশালের বেলায় কেনো ভিন্ন হবে! জজ ভিন্ন হতে পারে ভবন ভিন্ন হতে পারে কিন্তু আইন তো উভয় জায়গায় এক হওয়ারই কথা।


পাঁচ অগাস্টের পর বিএনপি দেশে নৈরাজ্য করছে, লুটপাট করছে চাঁদাবাজি করছে দখলদারি করছে আইন আদালত প্রশাসন কব্জা করার চেষ্টা করছে অনেক জায়গায় করে ফেলছেও যেটা এত বছর আওয়ামী লীগ করে রেখেছিলো।

যদি পূর্বের মত দলকেন্দ্রিক আইন আদালত থেকে যায় মেনে নিতে হয় তাহলে আওয়ামী লীগের অপরাধ কি!

যেটা আওয়ামী লীগ করেছিলো সেটা যদি এখন বিএনপি করে আর সেটা আমাদের মেনে নিতে হয় তাহলে লীগের উপর দোষ দিয়ে কার লাভ কি!

খেয়ে গেছে শেখ পরিবার খেতে চাইছে জিয়া পরিবার! 

এমনটা তো আমরা চাইনি জীবনের মায়া ত্যাগ করে জুলাই অগাস্টে আন্দোলন করেছি একটি সুন্দর দেশ গঠনের জন্য অথচ বিএনপি সেই স্বপ্নে বালুচাপা দিয়ে দিচ্ছে আর আমরা সেটা মেনে নিচ্ছি নিবো!

তাহলে তো হুদাই হাজার লোকের প্রান দেওয়ার যৌক্তিকতা দেখিনা, দেখিনা যৌক্তিকতা হাজার মানুষের পঙ্গুত্ব বরণ করার। 


এখনো যদি আইন আদালতে বিএনপির প্রভাব বিস্তার হয় তাহলে স্বাধীন আদালতের জিকির করার যৌক্তিকতা কোথায়! মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস একজন সদালাপী মানুষ আমরা তাকে শ্রদ্ধা করি সম্মান করি আমরা জানি তিনি যা বলেন তা করেন এবং করছেন।

তিনি বলছিলেন বিচার বিভাগ স্বাধীন কিন্তু বিএনপি যে বিচার বিভাগে আইন বিভাগে হস্তক্ষেপ চালাচ্ছে এই সংবাদ কি তার কানে পৌঁছে!  

আমরা তো শঙ্কিত! আওয়ামী লীগ ইলেকশনের সময় যে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করেছিলে সেই অবস্থা কি আবার বিএনপি তৈরি করবে নাকি!

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাহেব কি এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা আমাদের দিতে পারবেন!


বরিশাল সিটি প্রসঙ্গে আড়ালে আবডালে কারা কলকাঠি নেড়েছে নাড়তেছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা কাদের ইন্ধনে এসব কিছু হয়েছে তা আমরা জানি।

আমরা বিচার বিভাগ আইন বিভাগ দলিয় প্রভাবমুক্ত চাই।


আমরা চাই আদালতে গিয়ে একজন নাগরিক হিসেবে যতটুকু আমার অধিকার আছে ততটুকু বুঝে নিতে, আমরা চাই থানায় গিয়ে একজন নাগরিক হিসেবে যতটুকু আমার অধিকার ততটুকু আমি বুঝে নিতে, 

আমি কোন দলের নেতাকর্মী সেটা যেনো মূখ্য না হয়,  

তাদেরকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হোক,

দলিয় প্রভাব মুক্ত রাখা হোক।


ই আন্দোলনের নেতা মুফতী ফয়জুল করীম সত্তর উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হওয়া উচিত কারণ বরিশালে কারা কলকাঠি নেড়েছে তা অন্ততপক্ষে তার অজানা নয়,

অতএব তার উচিত উচ্চ আদালতে যাওয়া।


যদি আপোষে আদালত বরিশাল সিটির জন্য এক ও অভিন্ন রায় প্রদান না করে তাহলে ই আন্দোলনের নেতা আর তাদের আইনজীবীদের উচিত হচ্ছে চট্টগ্রাম ও ঢাকা দক্ষিণের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা। আর যদি রায় এক ও অভিন্ন হয় তাহলে আদালতের প্রতি সম্মাননা জানানো।

এই রায় কারোর করুনা নয় বরং এটা সকলের অধিকার যেমন অধিকার শাহাদাতের যেমন অধিকার ইশরাকের তেমন অধিকার মুফতী ফয়জুল করীমের,

এজন্য মুফতী ফয়জুল করীমকে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে হবে,

- লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে তার উচিত হবেনা কোনো প্রকার বৈষম্য মেনে নেওয়া হার স্বীকার করা।


ই আন্দোলনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ভিতর একটা বদঅভ্যেস রয়েছে সেটি হচ্ছে তারা আইন প্রশাসনের লোকদের সাথে ওঠাবসা চলাফেরা কম খুব কম।

তাদের সাথে ই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের পরিচয় তেমন একটা নেই বললেই চলে।

ঠিক কি কারণে তারা প্রশাসনের লোকদের সাথে সখ্যতা সম্পর্ক রাখেন না এটা ঠিক আমি বুঝিনা জানিনা।

- একটা ভিন্ন দলের ওর্য়াড সভাপতিকে আইন প্রশাসনের লোকেরা যেভাবে হাড়ে মজ্জায় চিনে সেভাবে ই আন্দোলনের জেলা পর্যায়ের নেতাকেও চিনেনা! এই ব্যর্থতা কার!আসলেই কার! 

- সবকিছু মিলিয়ে ই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের আইন আদালত প্রশাসন সম্পর্কে আরো গভীরতায় যেতে হবে আরো সম্পর্ক মজবুত করতে হবে। কারন রাজনৈতিক দল ও আইন আদালত প্রশাসন একে অপরের সাথে ওতোপ্রোতোভাবে পরিচয় না থাকলে আখেরে কারোরই কোনো সফলতা নেই।

- এখানে সফলতার মানে আবার কেউ ভিন্ন ভাবনায় যাইয়েন না যে আমি দলকেন্দ্রিক প্রশাসন বা আদালতের কথা বলছি।

আমি বলছি এগুলোর সাথে সকলের সম্পর্ক থাকা দরকার। 


সবশেষে কথা হচ্ছে 

আমরা চাই আমরা চাই এবং আমরা চাই-ই চাই

ঢাকা দক্ষিণে এবং চট্টগ্রামে যে রায় হয়েছে যে আইনের বলয়ে বরিশালেও সেই রায় হবে সেই আইনের বলয়েই।

হয় বরিশালে মুফতী ফয়জুল করীম ইন

নয় ঢাকা চট্টগ্রাম শাহাদাত ইশরাক আউট!

কথা ক্লিয়ার এবং ফাইনাল।


আমীনুল ইসলাম নরসিংদী 

ইসলামী আন্দোলনের সাবেক সমর্থক!

পাঁচ পাঁচে পঁচিশ!

Comments

Popular posts from this blog

পারভেজ নামের এই ছেলেটি তার নিজের ক্যাম্পাসে খুন হয়েছে আজ!

সংবাদ সম্মেলন থেকে রের করে দেওয়া হয়েছিল নারী সংবাদিকা কে!

ইমাম মুয়াজ্জিন হুজুরদের ফাসানো একিবারে সহজ, তাইনা?